ঋণ মুক্তির জন্য কোরআন সুন্নার আলোকে আমল

কোরআন সুন্নার আলোকে ঋণ

আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারিমে মানুষকে উত্তম ঋণ প্রদানের প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। উত্তম ঋণের বহুগুণ বিনিময় ঘোষণা করেছেন। যাতে মানুষ পরস্পরের বিপদে এগিয়ে আসে। করজে হাসানা বা উত্তম ঋণ প্রদান প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন-
‘কে সেই ব্যক্তি? যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ প্রদান করবে, ফলে আল্লাহ তাকে দ্বিগুণ, বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেবেন। আর আল্লাহই রিজিক সংকুচিত করেন এবং বৃদ্ধি করেন আর তোমাদেরকে তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৪৫)
করজে হাসানা বা উত্তম ঋণ আদান-প্রদানে রয়েছে অনেক ফজিলত। এ কথা যেমন ঠিক আবার ঋণ নিয়ে যদি তা পরিশোধ করা না হয় সে সম্পর্কেও রয়েছে কঠিন সতর্কতা। এ সম্পর্কেও কুরআন হাদিসে রয়েছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা- 
ঋণ গ্রহণ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন- 
‘হে মুমিনগণ! তোমরা যখন পরস্পরে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য ঋণের আদান-প্রদান কর, তখন তা লিখে নাও।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৮২) 
- আবার যদি কেউ ঋণ গ্রহণ করার পর তা দিতে অপারগ হয় বা কষ্টে পতিত হয়, সে সময় ঋণদাতার করণীয়ও আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, 
‘আর ঋণগ্রস্থ ব্যক্তি যদি অভাবী হয়, তাহলে তাকে স্বচ্ছল হওয়া পর্যন্ত অবকাশ দাও। আর যদি ঋণ মাফ করে দাও, তাহলে সেটা তোমাদের জন্য আরও উত্তম, যদি তোমরা তা জানতে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৮০)
ঋণ থেকে মুক্তির দোয়া
আমরা জীবনে চলার পথে অনেকেই ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়ি। কখনো ঋণের পরিমাণ বেশি হয়ে যায়। আর এই ঋণ থেকে মুক্তির জন্য হাদিস শরিফে দুটি বিশেষ দোয়া বর্ণিত হয়েছে -
(১)   «اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ».
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-‘আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-বুখলি ওয়াল-জুবনি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন দ্বালা‘য়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজা-ল।
অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।; (বুখারী, ২৮৯৩)।
হজরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল (সঃ) চিন্তাযুক্ত অবস্থায় উক্ত দোয়া পড়তেন।
(২)  «اللَّهُمَّ اكْفِنِي بِحَلاَلِكَ عَنْ حَرَامِكَ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكِ عَمَّنْ سِوَاكَ».
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মাকফিনী বিহালা-লিকা ‘আন হারা-মিকা ওয়া আগনিনী বিফাদ্বলিকা ‘আম্মান সিওয়া-ক।
অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আপনার হালাল দ্বারা পরিতুষ্ট করে আপনার হারাম থেকে ফিরিয়ে রাখুন এবং আপনার অনুগ্রহ দ্বারা আপনি ছাড়া অন্য সকলের থেকে আমাকে অমুখাপেক্ষী করে দিন। (তিরমিযী , ৩৫৬৩, আহমদ ১৩২১)।
একবার হজরত আলী রা.-এর কাছে এক ব্যক্তি তার ঋণ পরিশোধের জন্য কিছু সাহায্য চায়। এ সময় আলী রা. তাকে বলেন, আমি কি তোমাকে কয়েকটি শব্দ শিক্ষা দেব, যা আমাকে রাসুলুল্লাহ (সঃ)শিক্ষা দিয়েছেন? যদি তুমি এটা পাঠ করো, তাহলে আল্লাহই তোমার ঋণমুক্তির ব্যাপারে দায়িত্ব নিবেন, যদি তোমার ঋণ পর্বত সমান ও হয়।
এরপর আলী রা. ওই ব্যক্তিকে উক্ত দোয়া পড়তে বলেছিলেন। 
ঋণ পরিশোধের পর দোয়া
হজরত ইসমাইল ইবনে ইবরাহিম ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আবু রাবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু তার বাবার মাধ্যমে তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার কাছ থেকে চল্লিশ হাজার দিরহাম ঋণ বা করজ নিয়েছিলেন। এরপর তাঁর কাছে মাল (সম্পদ) আসলে তিনি তা আদায় করেন। আর এ বলে দোয়া করেন-
بَارَكَ اللَّهُ لَكَ فِي أَهْلِكَ وَمَالِكَ
উচ্চারণঃ ‘বারাকাল্লাহু লাকা ফি আহলিকা ওয়া মালিকা’
অর্থঃ ‘আল্লাহ তাআলা তোমার ঘরে এবং মালে (সম্পদে) বরকত দান করুন।’
অতএব কোনোভাবে ঋণগ্রস্ত হলে সে ঋণ আদায়ে যথাসম্ভব চেষ্টা করা উচিত। ঋণ আদায়ের সামর্থ না থাকলেও ঋণ আদায়ের প্রবল ইচ্ছা পোষণ ও চেষ্টা করা জরুরি। 
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উত্তম ঋণ গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আবার সে ঋণ যথা সময়ে যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন।  - আমিন।

Post a Comment

0 Comments