জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন (First 10 days of Dhul Hijjah)

জিলহজ্জ মাসের ১০ দিনের গুরুত্বপূর্ণ আমল ও ফজিলত সমূহঃ 

হজ্জের মাস জিলহজ্জ হলেও এ মাসের প্রথম ১০ দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম আল্লাহতায়ালা কোরআনে সূরায়ে ফজরের শুরুতে এই ১০ রাতের কসম খেয়ে বলেন, ‘কসম ফজরের এবং ১০ রাতের।’ এর দ্বারা জিলহজের প্রথম দশকের মর্যাদা ও গুরুত্ব প্রমাণিত হয়। তাই মাস হিসেবে রমজান আর দিন হিসেবে এই দশক শ্রেষ্ঠ ও সর্বাপেক্ষা মর্যাদাপূর্ণ। তাই একজন মুসলিমকে ইবাদতের এই সুবর্ণ সময়ের সদ্ব্যবহার করে অন্য সময়ের আমলের ঘাটতি পূরণ করার জন্য আমাদের এখনই প্রস্তুত হওয়া উচিত। 

রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তায়ালার নিকট কোনো দিনের আমলই এই দিনগুলোর নেক আমলের চেয়ে প্রিয়তর নয়।  সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় জিহাদও নয়? 

ত্তরে বললেন, না আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় জিহাদও নয়।  তবে হ্যাঁ, যদি কোনো ব্যক্তি নিজের জান ও মাল নিয়ে আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় জিহাদে যায় এবং সে কোনো কিছু নিয়ে ফিরে না আসে।’ - সহিহ বোখারি :১/১৩২ 

এই মাসের প্রথম ১০ দিনের মধ্যে শেষের দু’দিন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যাকে হাদিসের পরিভাষায় ‘ইয়াওমে আরাফা’ ও ‘ইয়াওমে নাহর’ বলা হয়। এ ছাড়াও দুটি ইবাদত এ মাসের প্রথম দশককে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত  করেছে। যে দুটি ইবাদত জিলহজ মাস ছাড়া অন্য কোনো মাসে আদায় করা সম্ভব নয়। এমনকি রমজানেও নয়। একটি হলো হজ্জ, অপরটি কোরবানি। 

এ মাসের করণীয় আমল- 

১. সামর্থ্যবান হলে হজ্জ পালন করা। -সূরা আল ইমরান: ৯৭‍, যাদের ওপর হজ ফরজ হয়েছে তাদের জন্য উচিত বিলম্ব না করে হজ আদায় করা। মুসলমান হিসেবে কোনো পুণ্যময় কাজে অবহেলা কিংবা বিলম্ব করা উচিত নয়। 

২.  ১০ই  জিলহজ্জ কোরবানি আদায় করা। বিত্তবান যাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব, তারা তো অবশ্যই কোরবানি আদায় করবেন। আর যাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়, তারাও কোরবানি করার চেষ্টা করা উচিত। যদি আগ্রহ ও ইচ্ছা থাকে তাহলে নিঃস্ব ব্যক্তিকেও আল্লাহ তায়ালা সামর্থ্যবান করে দিতে পারেন। সামর্থ্য ও আর্থিক সচ্ছলতা তো আল্লাহ তায়ালার হাতে। সে কারণেই কোরবানি ওয়াজিব না হলেও আমাদের উচিত কোরবানি করার চেষ্টা করা। 

৩. জিলহজ মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে কোরবানির আগ পর্যন্ত নখ, চুল ও মোচ ইত্যাদি না কাটা।  হাদিসে আছে, হজরত উম্মে সালমা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা যখন জিলহজ মাসের চাঁদ দেখতে পাও আর তোমাদের কেউ কোরবানি করার ইচ্ছা করে, তবে সে যেন চুল-নখ কাটা থেকে বিরত থাকে।’ -ইবনে হিব্বান 

৪. এই মাসের প্রথম দশক যেহেতু বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাশীল এবং এ সময়ের আমল আল্লাহ তায়ালার নিকট প্রিয় ও গ্রহণীয় তাই এই দশকে বেশি বেশি নেক আমল করা উচিত।  বিশেষত নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, দান-খয়রাত ইত্যাদি। 

জিলহজের প্রথম দশকের রোজা রাখার বিশেষ ফজিলত হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। রাসূল (সা.) জিলহজের প্রথম ৯ দিন (ঈদের দিন ছাড়া) রোজা রাখতেন।  তবে এই দশকের নবম দিনটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। এই দিন রোজা রাখার গুরুত্ব অনেক বেশি। রাসূল (সা.) বলেন, ‘আরাফার দিনের (৯ তারিখের) রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহ তায়ালার কাছে আশাবাদী যে, তিনি এর দ্বারা বিগত এক বছর ও আগামী এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ 

৫. বেশি বেশি তাকবির, তাহমিদ ও তাহলিল পাঠ করা। যেমন- আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ। - আবু দাউদ

৬. ৯ জিলহজের ফজর থেকে ১৩ জিলহজের আসর পর্যন্ত প্রতি ফরজ নামাজের পর তাকবিরে তাশরিক বলা প্রত্যেকের জন্য ওয়াজিব।  তাকবিরে তাশরিক হলো_ ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।’  

প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর একাকী কিংবা জামাতের সঙ্গে, পুরুষ-মহিলা প্রত্যেকের ওপর একবার এ তাকবির বলা ওয়াজিব। পুরুষ উচ্চস্বরে আর নারী অনুচ্চস্বরে তাকবির বলবে। 

সুপ্রিয় সুধি, জিলহজ্জ মাস তো কতোবারই এসেছে আমাদের সকলের জীবনে। আমরা কী জিলহজ্জ মাসের এই আমলসমূহ পালন করতে পেরেছি ? জিলহজ্জ মাস আমাদের জীবনে আর আসবে কি-না আমরা কেউ জানিনা। সুতরাং সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় কিন্তু এখনই।

জিলহজ্জ মাস কখন শুরু হবে?

১০ জুলাই/২০২১ শনিবার যিলক্বদ মাসের ২৯ দিন শেষ হবে। ঐ দিন সন্ধ্যাই চাঁদ দেখতে হবে। 

রোযা কখন শুরু করবেন?
যদি চাঁদ ১০ জুলাই/২০২১ শনিবার সন্ধ্যাই দেখা যায় তাহলে ঐ দিন রাতেই সাহরি খেয়ে ১১ জুলাই/২০২১ রবিবার থেকে রোযা রাখা শুরু করতে হবে।

আর যদি ১০ তারিখ চাঁদ দেখা না যায় তাহলে ১১ তারিখ রবিবার রাতে সাহরি খেয়ে ১২তারিখ সোমবার থেকে রোযা রাখতে হবে ।।

কতগুলো রোজা রাখবো?
রোযা মোট ৯ টা ( ১~৯ যিলহজ্জ)। সবগুলো রাখাই উত্তম । সব না পারলে সাধ্যমত রাখবেন। অন্তত কিছু না হলেও শেষের দুটো রোযা ( ৮,৯ যিলহজ্জ ) বা শেষ ( ৯ যিলহজ্জ ) একটা রোযা রাখা উচিত।
এগুলো নফল রোযা । রাখা না রাখা 
আপনার ইচ্ছা ।  কেউ না রাখলে গুনাহ হবে না। আপনার আখেরাত আপনি কেমন ভাবে গড়বেন সেটি আপনার।

যাদের রমজানের রোজা কাযা আছে তারা প্রথম ৭ টা  রোজা কাযা রোজার নিয়তে আর শেষ দুটো নফলের নিয়তে রাখতে পারবেন।।  

রোযা রাখতে গিয়ে যদি সাহরি খেতে না পারি তাহলে রোজা রাখা যাবে?
সাহরি খাওয়া সুন্নাত । ইচ্ছা করে ত্যাগ করা যাবে না। যদি ঘুমের কারনে উঠতে না পারেন তাহলে কিছু না খেয়ে শুধু নিয়ত করে রোযা 
রাখলেই হবে।। নফল রোযা রাখছি বললেই হবে। অন্যদিকে রোযা রাখার জন্য সাহরি করলেই নিয়ত হয়ে যাবে( ইন শা আল্লাহ) মুখে না বল্লেও চলবে।

আরাফার দুআ ও তাকবীরে তাশরীক
আরাফার দুআ আরাফার দিনে পড়তে হয়। তবে সেটা অন্যান্য যে কোন সময়ও পড়া যাবে। দুআ টি হলোঃ

لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
#উচ্চারণঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুওয়া আলা কুল্লি শাই ইং কদির। ( আরবি উচ্চারণ কোন ভাষাতেই লেখা যায় না । এটা পড়ে শিখে নিবেন ) এছাড়া নীচের তাসবীহটি বেশী বেশী পড়বেন।
سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ      وَسُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيْمِ
#উচ্চারণঃ সুবহানাল্লহি ওয়াবিহামদিহি ওয়া সুবহানাল্লহিল আযীম । 
( আরবি উচ্চারণ বাংলা বা ইংরেজী তে সঠিক ভাবে লেখা যায় না । কারো কাছ থেকে শিখে নিবেন ) আর তাকবীরে তাশরীক প্রত্যেক বালেগ পুরুষ ও নারী সকলের উপর ফরয নামায শেষ করে একবার উচ্চস্বরে পড়া ওয়াজিব। নারীরা নিজে শুনে  এমন ভাবে পড়বে বেশি উচু স্বরে পড়বে না।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বোঝার ও আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 Visit - My School -

Post a Comment

0 Comments