ছোটদের রোজা পালন

সোনামণিদের রোজা পালন

ছোটদের রোজা পালনে উৎসাহ এবং প্রস্তুতি

বড়দের মতো ছোটদেরও থাকে স্বপ্ন-আশা। থাকে মন ভরা ভালোবাসা আর বুক ভরা আনন্দ-উচ্ছ্বাস।
ছোটদের ওপর রোজা রাখা ফরজ নয়; কিন্তু রমজান এলে শিশু-কিশোরদের মাঝে দেখা যায় অন্যরকম এক উৎসাহ-উদ্দীপনা। ছোট ছোট শিশু আনন্দ-উৎসাহের মাধ্যমে ভোররাতে সেহরি খেয়ে থাকে। সারা দিন উপোস থেকে রোজা রাখে। ইফতারের সময় শিশুদের কলরব কার-না ভালো লাগে। শিশুরাও ইফতার সাজানো ও একসঙ্গে ইফতার খেতে পছন্দ করে। রোজা না রাখলেও তারা ইফতারের সময় রোজাদারদের মতো ইফতারের আনন্দ উপভোগ করে।

ছোটদের অল্প বয়স থেকে রোজা রাখার চেষ্টা করার মাধ্যমে অভ্যাস গঠন করা অনেক বড় উপকার। আর যেকোনো ভালো কাজের চেষ্টার জন্য রয়েছে উপকারিতা। এতে অভ্যাস গঠন হয়। যার ফলে বড় হলে রোজা পালনে তাদের কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হবে না। যাদের রোজা রাখা ফরজ নয়, তারা যদি রোজা রাখে, তবে তাদের রোজাও শুদ্ধ হবে এবং তারা রোজার ঘোষিত সব ফজিলত ও সওয়াব পাবে।

 
রমজান মুসলমানদের জন্য ত্যাগ-তিতিক্ষা ও একনিষ্ঠ সাধনার বার্তা নিয়ে আসে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সাত বছর বয়স হলে তোমরা তোমাদের সন্তানদের নামাজের জন্য নির্দেশ দাও। বয়স ১০ বছর হলে (নামাজ না পড়লে) তাদের প্রহার কর এবং তাদের বিছানা পৃথক করে দাও।’ (মুসনাদে আহমদ : ৬৭৫৬)
বিভিন্ন আলামত প্রকাশ বা বয়স ১৫ হলে বালেগ হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে। রোজার ক্ষেত্রে একই নিয়ম। সাত বছর বয়সে রোজা রাখা কঠিন হলেও রোজা রাখার চর্চা শুরু করতে হবে; কিন্তু বালেগ হলে অবশ্যই রোজা রাখতে হবে। এ জন্য আগে থেকেই রোজা রেখে ফরজ রোজার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।
 
এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের কর্তব্য হলো সন্তানদের ছোটবেলা থেকেই রোজা রাখতে উদ্বুদ্ধ করা এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রদান করা। যাতে বালেগ হওয়ার পর সে নিজে থেকে রোজা রাখতে উৎসাহ ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। সাহাবিরাও তাদের সন্তানদের ক্ষেত্রে এ নিয়মকানুন পালন করেছেন।
রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, প্রতিটি ব্যক্তি তার পরিবারের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল এবং সে তার অধীনস্থদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে।’ (নাসায়ি : ৯১৭৩)।
 
অনেক অভিভাবক আছেন, যারা তাদের সন্তানদের প্রতি স্নেহ ও ভালোবাসা প্রদর্শন করতে গিয়ে বরং তাদের প্রতি একধরনের অবিচার করেন। এমনটি করা যাবে না। ছোটরা রোজা না রাখলেও তাদের রোজার প্রয়োজনীয় নিয়মকানুন শেখাতে হবে। সেহরির সময় তাদের ডেকে তুলে একসঙ্গে সেহরি খেতে দিতে হবে। ইফতারির সময়ও তাদের সঙ্গে রাখতে হবে। অর্থাৎ, তারা নিয়ম মেনে সেহরি ও ইফতারে অংশগ্রহণ করবে।
  
অনেক সময় দেখা যায়, রোজা না রাখলেও সময় হওয়ার আগেই ইফতারি খেতে শুরু করেছে। এটা উচিত নয়; তা ছাড়া এটা আদবের বরখেলাফ। ছোটদের সেহরি ও ইফতারের নিয়মকানুনগুলো শিখিয়ে দিতে হবে এবং কেবল খাওয়া-দাওয়া নয়; তারা যেন ধর্মীয় বিধান হিসেবে সেহরি ও ইফতার গ্রহণ করে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এতে রোজা রাখার প্রতি তাদের মনে আগ্রহ জন্মাবে এবং পরবর্তী সময়ে এটা তাদের জন্য উপকারী হবে।
রোজার পাশাপাশি রমজান মাস হতে পারে ছোটদের কোরআন শেখার উৎকৃষ্ট সময়। কারণ, রমজান মাসে সরকারি ও বেসরকারি সব ধরনের সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। এ মাসে প্রতিটি পরিবারে কোরআন পাঠ ছাড়া ইসলামি আকিদা ও বিশ্বাস, নবী-রাসূলদের জীবনী, সাহাবায়ে কেরাম ও মুসলিম মনীষীদের জীবনী, মুসলমান হিসেবে কর্তব্য ও আখেরাতের অবস্থা প্রভৃতি বিষয়ে তালিম করা একান্ত দরকার। এসব বিষয় ছোটদের মানস গঠনে সহায়ক ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আর ছোটদের মানসিকভাবে প্রস্তুত করে তুলতে রমজান মাসই উপযুক্ত সময়।

রমজান মাস গুনাহ মাফের মাস। দোয়া কবুলের মাস। ছোট সোনামনিরা কোনো গুনাহ না করলেও আল্লাহ সন্তুষ্টি লাভের আশায় রোজা পালন করে থাকে। রোজা পালন কিন্তু শিশুর জন্য উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুর রোজা পালনে ধৈর্য ও মানসিক শক্তি বাড়ে। শিশুর রক্ত পরিশুদ্ধ হয়। শরীরের খারাপ পদার্থগুলো কিডনি, অন্ত্র দিয়ে বেশি পরিমাণে নিঃসৃত হয়। এ বছরও আমাদের সোনামনিরা রোজা পালন করছে। রমজানে তাদের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে মা-বাবাকেই।
ছোট সোনামনিদের রোজা পালনে তেমন বাধা নেই। এটি একটি মহান ইবাদত। ছোটবেলা থেকে এর চর্চা করলে বড় হয়ে তাদের ভালো কাজের উৎসাহ জোগাবে। এবার একটু বেশি সময় ধরে রোজা পালন করতে হচ্ছে বলে হয়তো বা তাদের একটু বেশি কষ্ট হবে। একটু দুর্বল হতে পারে। রোজা পালনে জটিল কোনো সমস্যা দেখা দেয় না।

শিশুদের রোজা পালনের উপকারিতা ও সাওয়াব

ছোটদের উপর রোজা রাখা ফরজ নয়।কিন্তু রমজান আসলে শিশু-কিশোরদের মাঝে দেখা যায় অন্যরকম এক উৎসাহ-উদ্দীপনা। ছোট ছোট শিশুরা আনন্দ-উৎসাহের মাধ্যমে ভোর রাতে সাহরি খায়। সারাদিন উপোস থেকে রোজা রাখে, যাতে রয়েছে উপকারিতা ও সাওয়াব।
ইফতারের সময় শিশুদের কলরব কার না ভালো লাগে। শিশুরাও ইফতার সাজানো এবং ইফতারের সময় মজা করে ইফতার খেতে পছন্দ সকরে। রোজা না রাখলেও তারা ইফতারের সময় রোজাদারদের মতো ইফতারের আনন্দ উপভোগ করে। চমৎকার একটি পরিবেশ বিরাজ করে প্রতিটি মুসলিম ঘরে।
অল্প বয়স থেকে রোজা রাখার চেষ্টা করার মাধ্যমে অভ্যাস গঠন করা অনেক বড় উপকার। আর যে কোনো ভালো কাজর চেষ্টায় রয়েছে জন্য উপকারিতা। এতে অভ্যাস গঠন হয়। বড় হলে রোজা পালনে তাদেরকে কোনো প্রতিবন্ধতার মুখোমুখি হতে হয় না। যাদের রোজা রাখা ফরজ নয়, তারা যদি রোজা রাখে তবে তাদের রোজা শুদ্ধ হবে এবং তারা রোজার ঘোষিত সব ফজিলত ও সাওয়াব পাবে। রোজা রাখা নাবালক শিশুরাই সাওয়াব পাবে না বরং ভালো কাজের অভ্যাস গঠনে নির্দেশ ও সহযোগিতা করার কারণে শিশুদের বাবা-মাদের জন্যও রয়েছে সাওয়াব।
সুতরাং প্রত্যেক শিশুর অভিভাবকদের উচিত, ছোট ছোট শিশুদের মধ্যে যারা রোজা রাখতে সক্ষম কিন্তু ফরজ হয়নি তাদের রোজা রাখার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে উৎসাহ দেয় এবং রোজার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাহাবাগণ নিজেদের নাবালক ছোট বাচ্চাদের রোজা রাখতে উদ্বুদ্ধ করতেন। হাদিসে এসেছে- হজরত রুবাইয়ি বিনতে মুআওবিয রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশুরার দিন সকালে মদিনার উপকন্ঠে বসবাসরত আনসারদের কাছে এ খবর পাঠালেন, যারা ফজরের আগে থেকে রোজা রেখেছে, তারা যেন তাদের রোজা পূর্ণ করে। আর যারা রোজা না রাখা সত্বেও ফজর অতিক্রম করেছে, তারাও যেন বাকি দিন রোজা পালন করে।
সুতরাং আমরা তার পর থেকে রোজা রাখতাম এবং আমাদের ছোট ছোট শিশুদের রোজা রাখাতাম এবং তাদেরকে নিয়ে মসজিদে যেতাম। তাদের জন্য তুলা দ্বারা পুতুল বানাতাম। তাদের কেউ খাবারের জন্য কান্না করলে তাদেরকে সেই পুতুল দিতাম। আর এভাবেই ইফতারের সময় হয়ে যেত।
শিশুদের ক্ষুধার কষ্ট দূর করা সম্পর্কে অন্য বর্ণনায় এসেছে- আমরা তাদেরকে সে খেলনা দিতাম, যাতে তারা (খাবারের কথা) ভুলে থাকে এবং খেলার মাঝে তাদের রোজা পূর্ণ করতে পারে।’ (মুসলিম)। সুতরাং ছোট বয়স থেকে রোজায় বাচ্ছাদের উদ্বুদ্ধ করা ইসলামে নীতি। আর তাতে যেমন রয়েছে শিশুদের উপকারিতা ও সাওয়াব। তেমনি যারা তাদের রোজার প্রতি উৎসাহ যোগায় তাদের জন্যও রয়েছে সাওয়াব।
 
শিশুরা যেভাবে রোজা রাখতে অভ্যস্ত হয় 
নিম্নে বর্ণিত কিছু পদক্ষেপ অনুসরণ করলে শিশুরা রমজানের রোজা রাখায় অভ্যস্ত হবে -

১। শিশুদের নিকট রোযার ফজিলত সম্পর্কিত হাদিসগুলো তুলে ধরতে হবে। তাদেরকে জানাতে হবে সিয়াম পালন জান্নাতে প্রবেশের মাধ্যম। জান্নাতের একটি দরজার নাম হচ্ছে ‘আর-রাইয়্যান’।এ দরজা দিয়ে শুধু রোযাদারগণ প্রবেশ করবে।

২। রমজান আসার পূর্বেই কিছু রোযা রাখানোর মাধ্যমে সিয়াম পালনে তাদেরকে অভ্যস্ত করে তোলা। যেমন- শা’বান মাসে কয়েকটি রোযা রাখানো। যাতে তারা আকস্মিকভাবে রমজানের রোযার সম্মুখীন না হয়।

৩। প্রথমদিকে দিনের কিছু অংশে রোযা পালন করানো।ক্রমান্বয়ে সেই সময়কে বাড়িয়ে দেয়া।

৪। একেবারে শেষ সময়ে সেহেরি গ্রহণ করা।এতে করে তাদের জন্য দিনের বেলায় রোযা পালন সহজ হবে।

৫। প্রতিদিন বা প্রতি সপ্তাহে পুরস্কার দেওয়ার মাধ্যমে তাদেরকে রোযা পালনে উৎসাহিত করা।

৬। ইফতার ও সেহেরীর সময় পরিবারের সকল সদস্যের সামনে তাদের প্রশংসা করা।যাতে তাদের মানসিক উন্নয়ন ঘটে।

৭। যার একাধিক শিশু রয়েছে তাদের মাঝে প্রতিযোগিতার মনোভাব সৃষ্টি করা। তবে খুবই সতর্কতার সাথে খেয়াল রাখতে হবে যাতে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়া শিশুটির প্রতি কঠোরতা প্রদর্শন করা না হয়।

৮। তাদের মধ্যে যাদের ক্ষুধা লাগবে তাদেরকে ঘুম পাড়িয়েঅথবা বৈধ খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রাখা। এমন খেলনা যাতে পরিশ্রম করতে হয় না। যেভাবে মহান সাহাবীগণ তাঁদের সন্তানদের ক্ষেত্রে করতেন। নির্ভরযোগ্যইসলামী চ্যানেলগুলোতে শিশুদের উপযোগী কিছু অনুষ্ঠান রয়েছেএবংরক্ষণশীল কিছু কার্টুন সিরিজ রয়েছে। এগুলো দিয়ে তাদেরকে ব্যস্ত রাখা যেতে পারে।

৯। ভাল হয় যদি বাবা তার ছেলেকে মসজিদে নিয়ে যান। বিশেষতঃ আসরের সময়। যাতে সে নামাযের জামাতে হাযির থাকতে পারে। বিভিন্ন দ্বীনি ক্লাসে অংশ নিতে পারে এবং মসজিদে অবস্থান করে কুরআন তিলাওয়াত ও আল্লাহ তা’আলার যিকিরে রত থাকতে পারে।

১০। যেসব পরিবারের শিশুরা রোযা রাখে তাদের বাসায় বেড়াতে যাওয়ার জন্য দিনে বা রাতের কিছু সময় নির্দিষ্ট করে নেয়া। যাতে তারা সিয়াম পালন অব্যাহত রাখার প্রেরণা পায়।

১১। ইফতারের পর শরিয়ত অনুমোদিত ঘুরাফিরার সুযোগ দেয়া। অথবা তারা পছন্দ করে এমন খাবার, চকলেট, মিষ্টি, ফল-ফলাদি ও শরবত প্রস্তুত করা।

 
মানসিক প্রস্তুতি : 
ছোটদের ওপর শরিয়তের বিধি-বধান মেনে চলা আবশ্যক নয়। তবে তাদের শরিয়তের বিধি-বিধান মেনে চলার প্রতি অভ্যস্ত করাতে হবে। তাদের মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে। এই মানসিক প্রস্তুতি তাদের পরবর্তী সময়ে শরিয়তের যেকোনো বিধান পালন করাটা সহজ করে দেবে। সেই লক্ষ্যে তাদের হৃদয়ে ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি ভালোবাসা এবং তা পালনে আগ্রহী করে তোলা।

কৌশল অবলম্বন করা : ছোটদের রোজার প্রতি অভ্যস্ত করতে উপযোগী কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে। শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী ধীরে ধীরে রোজা পালনের প্রতি উৎসাহিত করতে হবে। প্রথম দিকে অর্ধদিন এবং ধীরে ধীরে পূর্ণদিন রোজা রাখার প্রতি অভ্যস্ত করাতে হবে। এ ক্ষেত্রে ছোটরা রোজা রাখলে তাদের প্রশংসা করা। পরিবারে একাধিক নাবালগ বাচ্চা থাকলে তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মানসিকতা জাগিয়ে তুলতে হবে। ক্ষুধার কথা বললে, ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া বা খেলায় ব্যস্ত রাখবে—যেভাবে সাহাবারা করতেন। তবে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নেবে, বেশি অসুবিধা মনে করলে ওই দিনের রোজা ভেঙে পরের দিন আবার চেষ্টা করবে।

রোজার মর্যাদা বর্ণনা করা : যেকোনো বিষয়ের মর্যাদা জানা থাকলে তার প্রতি গুরুত্ব বাড়ে। ছোটদের রোজা ও রমজানের মর্যাদা বর্ণনা করা, যাতে তারা রোজা পালনে উৎসাহিত হয়। তবে এ ক্ষেত্রে তাদের প্রতি কখনোও কঠোরতা প্রদর্শন করা যাবে না। রোজা না রাখলে বকাঝকা করা যাবে না।

পুরস্কার দেওয়া : ছোট বাচ্চারা রোজা রাখলে তাদের জন্য বড়দের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানানো ও পুরস্কারের ব্যবস্থা করা। তাদের পছন্দনীয় জিনিস পুরস্কার দেবে। এটি ছোটদের  রোজা রাখতে উৎসাহী ও অনুপ্রাণিত করবে। প্রয়োজনে তাদের কোথাও বেড়াতে নিয়ে যাবে।


Post a Comment

0 Comments