Surah An-Naba

আল কোরআন ত্রিশতম পারা, সূরা আন নাবা/৭৮, মাক্কী, আয়াত - ৪০
[কোরআনে কারিম তো অবতীর্ণ হয়েছে আরবিতে। আল্লাহু সুবহানাহুতায়ালা এই কিতাবকে আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করেছেন। এই আরবি কিতাবকে আপনি বাংলা উচ্চারণে পড়তে পারবেন না। কারণ এতে যথাযথ উচ্চারণ হবে না, উচ্চারণ ভুল হবে। ফলে বেশির ভাগ ওলামায়ে কেরামের বক্তব্য অনুযায়ী কুরআনে কারিমকে বাংলা উচ্চারণে পড়া জায়েজ নেই। এই তিলাওয়াতটি ভুল এবং হারাম। তাই এই তিলাওয়াত শুদ্ধ নয়। তেমনি কোরআনের আরবি তিলাওয়াত শিখতে হলে আপনাকে আরবি শিখতে হবে। তাই আপনি আরবি শিখে নেবেন, তারপর কোরআন তিলাওয়াত করবেন। অডিও শুনে মিলিয়ে পাড়ার অনুরোধ রইল।]

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

অর্থঃ পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে

সূরা আন নাবা (النّبا), আয়াত: ১
 
عَمَّ يَتَسَآءَلُوْنَ
 
আম্মা ইয়াতাছাআলুন

অর্থঃ তারা পরস্পরে কি বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে?

তাফসীর

আয়াত সংখ্যাঃ ৪০ আয়াত। নাযিল হওয়ার স্থানঃ মক্কী।

রসূল (সাঃ) যখন নবুঅতপ্রাপ্ত হলেন, তখন তিনি তাওহীদ, কিয়ামত ইত্যাদির কথা বয়ান করতে লাগলেন এবং কুরআন মাজীদ তিলাঅত করে শুনালেন, সেই সময় কাফের ও মুশরিকরা আপোসে জিজ্ঞাসা করতে লাগল যে, কিয়ামত কি সত্যিকারে ঘটবে -- যেমন এই লোকটি দাবী করছে? অথবা এই কুরআন কি সত্যিকারে আল্লাহর তরফ থেকে অবতীর্ণ করা হয়েছে -- যেমন মুহাম্মাদ বলছে? প্রশ্নবাচক শব্দ দ্বারা আল্লাহ প্রথমে সেই সমস্ত জিনিসের সেই মহত্ত্ব প্রকাশ করেছেন, যা তার আছে। অতঃপর তিনি নিজেই এর উত্তর দিয়েছেন যে,-------।

সূরা আন নাবা (النّبا), আয়াত: ২

عَنِ النَّبَاِ الْعَظِيْمِ ۙ

আনিন্নাবাইল ‘আজীম।

অর্থঃ মহাসংবাদটির বিষয়ে [১],

তাফসীর

[১] অর্থাৎ তারা কি বিষয়ে পরস্পরে জিজ্ঞাসাবাদ করছে? অতঃপর আল্লাহ্ নিজেই উত্তর দিয়েছেন যে, মহাখবর সম্পর্কে। তাফসীরবিদ মুজাহিদ বলেন, এখানে মহাখবর বলে কুরআনকে উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। কাতাদাহ বলেন, এখানে মহাখবর বলে কেয়ামত বোঝানো হয়েছে। এখানে এটাই প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত। [ইবন কাসীর] - তাফসীরে জাকারিয়া

সূরা আন নাবা (النّبا), আয়াত: ৩


 الَّذِيْ هُمْ فِيْهِ مُخْتَلِفُوْنَ  ؕ
 
আল্লাযী হুম ফীহি মুখতালিফূন

অর্থঃ যে বিষয়ে তারা মতানৈক্য করছে [১],

তাফসীর

[১] আয়াতের আরেকটি অর্থ হচ্ছেঃ “এ ব্যাপারে তারা নানা ধরনের কথা বলছে ও ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে ফিরছে।” অন্য অর্থ এও হতে পারে, দুনিয়ার পরিণাম সম্পর্কে তারা নিজেরাও কোন একটি অভিন্ন আকীদা পোষণ করে না বরং “তাদের মধ্যে এ ব্যাপারে বিভিন্ন মত পাওয়া যায়।” কেউ কেউ আবার আখেরাত পুরোপুরি অস্বীকার করতো না, তবে তা ঘটতে পারে কিনা, এ ব্যাপারে তাদের সন্দেহ ছিল। কুরআন মজীদে এ ধরনের লোকদের এ উক্তি উদ্ধৃত করা হয়েছে, “আমরা তো মাত্র একটি ধারণাই পোষণ করি, আমাদের কোন নিশ্চিত বিশ্বাস নেই।” [সূরা আল-জাসিয়াহ, ৩২] আবার কেউ কেউ একদম পরিষ্কার বলতো, “আমাদের এ দুনিয়ার জীবনটিই সবকিছু এবং মরার পর আমাদের আর কখনো দ্বিতীয়বার উঠানো হবে না।” [সূরা আল-আন‘আম: ২৯]; “আমাদের এই দুনিয়ার জীবনটিই সব কিছু। এখানেই আমরা মরি, এখানেই জীবন লাভ করি এবং সময়ের চক্র ছাড়া আর কিছুই নেই যা আমাদের ধ্বংস করে।” [সূরা আল-জাসিয়াহ্: ২৪] [ফাতহুল কাদীর] - তাফসীরে জাকারিয়া


সূরা আন নাবা (النّبا), আয়াত: ৪
 
كَلَّا سَيَعْلَمُوْنَ ۙ

কাল্লা-ছাইয়া‘লামূন

অর্থঃ কখনো না [১], তারা অচিরেই জানতে পারবে;

তাফসীর

[১] অর্থাৎ আখেরাত সম্পর্কে যেসব কথা এরা বলে যাচ্ছে এগুলো সবই ভুল। এরা যা কিছু মনে করেছে ও বুঝেছে তা কোনক্রমেই সঠিক নয়। [মুয়াসসার] - তাফসীরে জাকারিয়া


সূরা আন নাবা (النّبا), আয়াত: ৫
 
ثُمَّ كَلَّا سَيَعْلَمُوْنَ

ছু ম্মা কাল্লা-ছাইয়া‘লামূন

অর্থঃ তারপর বলি কখনো না, তারা অচিরেই জানতে পারবে।

তাফসীর

[১] অর্থাৎ আখেরাত সম্পর্কে যেসব কথা এরা বলে যাচ্ছে এগুলো সবই ভুল। এরা যা কিছু মনে করেছে ও বুঝেছে তা কোনক্রমেই সঠিক নয়। [মুয়াসসার]


 সূরা আন নাবা (النّبا), আয়াত: ৬

 
اَلَمْ نَجْعَلِ الْاَرْضَ مِهٰدًا ۙ
 
আলাম নাজ‘আলিল আরদা মিহা-দা-

অর্থঃ আমি কি করিনি ভূমিকে বিছানা

তাফসীর

অর্থাৎ, বিছানার মত তোমরা ভূপৃষ্ঠের উপর চলা-ফেরা কর, উঠা-বসা কর, শয়ন কর এবং সমস্ত কাজ-কর্ম করে থাক। পৃথিবীকে তিনি বিক্ষিপ্তভাবে হেলা-দোলা থেকে রক্ষা করেছেন। - তাফসীরে আহসানুল বায়ান


সূরা আন নাবা (النّبا), আয়াত: ৭
 
 وَّالْجِبَالَ اَوْتَادًا ۪ۙ
 
ওয়াল জিবা-লা আওতা-দা।

অর্থঃ এবং পর্বতমালাকে পেরেক?

তাফসীর

أوتاد শব্দটি وتد-এর বহুবচন; আর তার অর্থ পেরেক। অর্থাৎ, পর্বতসমূহকে পৃথিবীর জন্য পেরেকস্বরূপ সৃষ্টি করেছেন; যাতে পৃথিবী স্থির থাকে এবং হেলা-দোলা না করে। কেননা, হেলা-দোলা ও বিক্ষিপ্ত অস্থিরতার অবস্থায় পৃথিবী বাসযোগ্য হতো না। (প্রকাশ থাকে যে, ভূগর্ভে কীলক বা পেরেকের মতই পর্বতমালার মূল বা শিকড় গাড়া আছে; যা ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা থেকে প্রায় ১০ থেকে ১৫ গুণ বেশী দীর্ঘ! - তাফসীরে আহসানুল বায়ান

 

 সূরা আন নাবা (النّبا), আয়াত: ৮


 وَّخَلَقْنٰكُمْ اَزْوَاجًا ۙ
 
ওয়া খালাকনা-কুম আঝওয়া-জা-

অর্থঃ  আর আমি তোমাদেরকে জোড়ায় জোড়ায়, সৃষ্টি করেছি

তাফসীর

অর্থাৎ,পুরুষ ও স্ত্রী, নর ও নারী। অথবা أزواج -এর অর্থ হল নানা ধরন ও রঙ। অর্থাৎ, তিনি বিচিত্র ধরনের আকার-আকৃতি ও রঙে-বর্ণে সৃষ্টি করেছেন। সুশ্রী-কুশ্রী, লম্বা-বেঁটে, গৌরবর্ণ-কৃষ্ণবর্ণ ইত্যাদি বিভিন্ন বৈচিত্রে সৃষ্টি করেছেন। তাফসীরে আহসানুল বায়ান


 সূরা আন নাবা (النّبا), আয়াত: ৯

 
وَّجَعَلْنَا نَوْمَكُمْ سُبَاتًا ۙ
 
ওয়া জা‘আলনা-নাওমাকুম ছুবা-তা।

অর্থঃ আর তোমাদের নিদ্রাকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী[১],

তাফসীর

[১] মানুষকে দুনিয়ায় কাজ করার যোগ্য করার জন্য মহান আল্লাহ্ অত্যন্ত কর্মকুশলতা সহকারে তার প্রকৃতিতে ঘুমের এক চাহিদা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। কর্মের ক্লান্তির পর ঘুম তাকে স্বস্তি, আরাম ও শান্তি দান করে। [সা‘দী] - তাফসীরে জাকারিয়া


সূরা আন নাবা (النّبا), আয়াত: ১০
 
وَّجَعَلْنَا الَّيْلَ لِبَاسًا ۙ
 
ওয়া জা‘আলনাল্লাইলা লিবা-ছা।

অর্থঃ আর রাত্রিকে করেছি আবরণ।

তাফসীর

অর্থাৎ, রাতের অন্ধকার এবং কালো বর্ণ প্রতিটি জিনিসকে নিজের আঁচলে আবৃত ও গোপন করে নেয়। যেমনভাবে, আবরণ বা পোষাক-পরিচ্ছদ মানুষের দেহকে আবৃত ও গোপন করে নেয়। তাফসীরে আহসানুল বায়ান

 

 সূরা আন নাবা (النّبا), আয়াত: ১১


وَّجَعَلْنَا النَّهَارَ مَعَاشًا ۪
 
ওয়া জা‘আলনান্নাহা-রা মা‘আ-শা-।

অর্থঃ দিনকে করেছি জীবিকা অর্জনের সময়

তাফসীর

উদ্দেশ্য হল যে, তিনি দিনকে উজ্জ্বলময় বানিয়েছেন; যাতে লোকেরা জীবিকা ও রুযী অন্বেষণের জন্য চেষ্টা ও পরিশ্রম করতে পারে। তাফসীরে আহসানুল বায়ান


 সূরা আন নাবা (النّبا), আয়াত: ১২

 
وَّبَنَيْنَا فَوْقَكُمْ سَبْعًا شِدَادًا ۙ
 
ওয়া বানাইনা-ফাওকাকুম ছাব‘আন শিদা-দা-।

অর্থঃ নির্মান করেছি তোমাদের মাথার উপর মজবুত সপ্ত-আকাশ।।[১]

তাফসীর

[১] সুস্থিত ও মজবুত বলা হয়েছে এ অর্থে যে, আকাশ তৈরি হয়েছে অত্যন্ত দৃঢ়-সংঘবদ্ধভাবে, তার মধ্যে সামান্যতম পরিবর্তনও কখনো হয় না, ধ্বংস হয় না, ফেটে যায় না। [তাবারী] - তাফসীরে জাকারিয়া

[1] এদের প্রতিটির মাঝে পাঁচ শত বছরের পথের দূরত্ব আছে। যা এসবের মজবুতি প্রমাণ করে। তাফসীরে আহসানুল বায়ান


সূরা আন নাবা (النّبا), আয়াত: ১৩
 
وَّجَعَلْنَا سِرَاجًا وَّهَّاجًا ۪ۙ
 
ওয়া জা‘আলনা-ছিরা-জাওঁ ওয়াহহা-জা-।

অর্থঃ এবং একটি উজ্জ্বল প্রদীপ সৃষ্টি করেছি[১]।

তাফসীর

[১] এখানে সূর্যকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে, যা সমগ্ৰ পৃথিবীর মানুষের জন্য প্রজ্জ্বলিত প্ৰদীপ। [ইবন কাসীর] - তাফসীরে জাকারিয়া

 

 সূরা আন নাবা (النّبا), আয়াত: ১৪


وَّاَنْزَلْنَا مِنَ الْمُعْصِرٰتِ مَآءً ثَجَّاجًا ۙ
 
ওয়া আনঝালনা-মিনাল মু‘সিরা-তি মাআন ছাজ্জা-জা-।

অর্থঃ আমি বর্ষণ করি মেঘমালা থেকে প্রচুর বৃষ্টি,  [১]

তাফসীর

[১] معصرات শব্দটি معصرة এর বহুবচন। এর অর্থ জলে পরিপূর্ণ মেঘমালা। [তাবারী] - তাফসীরে জাকারিয়া

[1] معصرات সেই মেঘসমূহ যা পানি দ্বারা পরিপূর্ণ থাকে, কিন্তু যা এখনো বর্ষণ করেনি। যেমন, المرأة المعتصرة সেই নারীকে বলা হয়, যার মাসিক (ঋতুর) সময় ঘনিয়ে এসেছে। ثجاجًا অর্থ হল অতিরিক্তভাবে প্রবাহিত হয়ে যায় এমন পানি। তাফসীরে আহসানুল বায়ান


 সূরা আন নাবা (النّبا), আয়াত: ১৫

 
لِّنُخْرِجَ بِهٖ حَبًّا وَّنَبَاتًا ۙ
 
লিনুখরিজা বিহী হাব্বাওঁ ওয়া নাবা-তা-।

অর্থঃ যাতে তা দ্বারা আমরা উৎপন্ন করি শস্য, উদ্ভিদ,[১]

তাফসীর

[1] حب (শস্য) হল সেই সকল ফসল, যা খোরাকের জন্য গুদামজাত করে রাখা যায়; যেমন, গম, ধান, যব, ভুট্টা ইত্যাদি। আর نبات বা উদ্ভিদ হল শাক-সবজি এবং ঘাস-পাতা ইত্যাদি যা পশুতে ভক্ষণ করে থাকে। তাফসীরে আহসানুল বায়ান


সূরা আন নাবা (النّبا), আয়াত: ১৬
 
وَّجَنّٰتٍ اَلْفَافًا ؕ
 
ওয়া জান্না-তিন আলফা-ফা-।

অর্থঃ ও ঘন সন্নিবিষ্ট উদ্যান[১]।

তাফসীর

[1] ألفافًا অধিক ডাল-পালার কারণে এক অপরের সাথে মিলে যাওয়া গাছ-পালা অর্থাৎ, সঘন বাগান। তাফসীরে আহসানুল বায়ান

 

 সূরা আন নাবা (النّبا), আয়াত: ১৭


اِنَّ یَوۡمَ الۡفَصۡلِ کَانَ مِیۡقَاتًا
 

ইন্না ইয়াওমাল ফাসলি কা-না মীকাতা-।


অর্থঃ নিশ্চয় বিচার দিবস নির্ধারিত রয়েছে।


তাফসীর

(১) অর্থাৎ যে দিন মহান আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর সৃষ্টির মাঝে বিচার-মীমাংসা করবেন সে দিন তথা কেয়ামত নির্দিষ্ট সময়েই আসবে। [মুয়াস্‌সার] - তাফসীরে জাকারিয়া


 সূরা আন নাবা (النّبا), আয়াত: ১৮

 
یَّوۡمَ یُنۡفَخُ فِی الصُّوۡرِ فَتَاۡتُوۡنَ اَفۡوَاجًا 
 
ইয়াওমা ইউনফাখুফিসসুরি ফাতা’তূনা আফওয়া-জা

অর্থঃ সেদিন শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে তখন তোমরা দলে দলে আসবে(১)

তাফসীর

(১) অন্যান্য আয়াত থেকে জানা যায় যে, দু’বার শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে। প্রথম ফুৎকারের সাথে সাথে সমগ্ৰ বিশ্ব ধ্বংস প্রাপ্ত হবে এবং দ্বিতীয় ফুৎকারের সাথে সাথে পুনরায় জীবিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। এ সময় বিশ্বের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সব মনুষ দলে দলে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে। এ স্থানে শিংগার দ্বিতীয় ফুঁকের কথা বলা হয়েছে। এর আওয়াজ বুলন্দ হবার সাথে সাথেই প্রথম থেকে শেষ- সমস্ত মরা মানুষ অকস্মাৎ জেগে উঠবে। [ফাতহুল কাদীর] - তাফসীরে জাকারিয়া  

[1] কেউ কেউ এর ভাবার্থ এটাও বলেছেন যে, প্রত্যেক উম্মত নিজের রসূলের সাথে কিয়ামতের দিন উপস্থিত হবে। এটা হবে দ্বিতীয় ফুৎকারের সময়, যখন সমস্ত মানুষ কবর থেকে জীবিত হয়ে বের হয়ে আসবে। আল্লাহ তাআলা আসমান হতে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। যাতে মানুষ উদ্ভিদের ন্যায় উদগত হবে। মানুষের মেরুদন্ডের (নিম্নভাগে) শেষাংশের হাড় ব্যতীত দেহের সব কিছু মাটিতে বিনষ্ট হয়ে যাবে। ঐ হাড় দ্বারা কিয়ামতের দিন সমস্ত সৃষ্টিকে পুনর্বার গঠন করা হবে।

(সহীহ বুখারী সূরা নাবার ব্যাখ্যা পরিচ্ছেদ) তাফসীরে আহসানুল বায়ান


সূরা আন নাবা (النّبا), আয়াত: ১৯
 
 وَّ فُتِحَتِ السَّمَآءُ فَکَانَتۡ اَبۡوَابًا
 
ওয়া ফুতিহাতিছ ছামাউ ফাকা-নাত আবওয়া-বা-।

অর্থঃ আকাশ বিদীর্ণ হয়ে; তাতে বহু দরজা সৃষ্টি হবে [১]।

তাফসীর

(১) “আকাশ খুলে দেয়া হবে” এর মানে এটাও হতে পারে যে, ঊর্ধ্বজগতে কোন বাধা ও বন্ধন থাকবে না। আসমানে বিভিন্ন দরজা তৈরি হয়ে সেগুলো হতে সবদিক থেকে ফেরেশতারা নেমে আসতে থাকবে। [ইবন কাসীর] - তাফসীরে জাকারিয়া

[1] অর্থাৎ, ফিরিশতাগণের জন্য অবতরণের পথ হয়ে যাবে। এবং তাঁরা পৃথিবীতে অবতরণ করবেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

 

 সূরা আন নাবা (النّبا), আয়াত: ২০


وَّ سُیِّرَتِ الۡجِبَالُ فَکَانَتۡ سَرَابًا 
 

ওয়া ছুইয়্যিরতিল জিবা-লুফাকা-নাত ছারা-বা-।


অর্থঃ আর চলমান করা হবে পর্বতসমূহকে, ফলে সেগুলো হয়ে যাবে মরীচিকা(১),


তাফসীর

(১) পাহাড়ের চলার ও মরীচিকায় পরিণত হবার মানে হচ্ছে, দেখতে দেখতে মুহুর্তের মধ্যে পর্বতমালা স্থানচ্যুত হয়ে যাবে। তারপর ভেঙ্গে চুৰ্ণবিচূর্ণ হয়ে এমনভাবে মরীচিকার মতো ছড়িয়ে পড়বে যে, মনে হবে সেখানে কিছু আছে, কিন্তু কিছু নেই। এর পরই যেখানে একটু আগে বিশাল পর্বত ছিল সেখানে আর কিছুই থাকবে না। এ অবস্থাকে অন্যত্র বলা হয়েছেঃ “এরা আপনাকে জিজ্ঞেস করছে, সেদিন এ পাহাড় কোথায় চলে যাবে? এদের বলে দিন, আমার রব তাদেরকে ধূলোয় পরিণত করে বাতাসে উড়িয়ে দেবেন এবং যমীনকে এমন একটি সমতল প্রান্তরে পরিণত করে দেবেন যে, তার মধ্যে কোথাও একটুও অসমতল ও উঁচু-নীচু জায়গা এবং সামন্যতম ভাজও দেখতে পাবে না।” [সূরা ত্বা-হা: ১০৫–১০৭] [ইবন কাসীর] - তাফসীরে জাকারিয়া


[1] سراب (মরীচিকা) সেই বালিরাশিকে বলা হয়, যা (রোদের তাপে) দূর হতে পানি মনে হয়। পাহাড়ও মরীচিকার মত কেবল দূর হতে দৃশ্যমান বস্তুতে পরিণত হয়ে যাবে। আর তারপরই তা একেবারেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তার কোন চিহ্ন পর্যন্ত বাকী থাকবে না। কেউ কেউ বলেছেন যে, কুরআনে (কিয়ামতের দিন) পাহাড়ের নানান ধরণের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে, যাদের মাঝে সমন্বয়ের পথ হল এই যে, (১) প্রথমে তা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেওয়া হবে। فدكتا دكة واحدة (সূরা হাক্ক্বাহ ১৪ আয়াত) (২) তারপর তা ধূনিত রঙ্গীন পশমের মত হয়ে যাবে। كالعهن المنفوش (সূরা ক্বারিআহ ৫ আয়াত) (৩) তারপর তা হবে উৎক্ষিপ্ত ধূলিকণার মত। فكانت هباء منبثا (ওয়াক্বিআহ ৬আয়াত) (৪) তারপর তা উড়িয়ে দেওয়া হবে। ينسفها ربي نسفًا (সূরা ত্বাহা ১০৫ আয়াত) আর পঞ্চম অবস্থায় তা سراب মরীচিকার মত অস্তিত্বহীন হয়ে যাবে; যেমন এখানে বলা হয়েছে। (ফাতহুল ক্বাদীর) - তাফসীরে আহসানুল বায়ান


 সূরা আন নাবা (النّبا), আয়াত: ২১

 
 اِنَّ جَهَنَّمَ کَانَتۡ مِرۡصَادًا 
 
ইন্না জাহান্নামা কা-নাত মিরসা-দা-।

অর্থঃ নিশ্চয় জাহান্নাম প্রতীক্ষায় থাকবে,

তাফসীর
[1] ওঁৎ পাতার ঘাঁটি এমন জায়গাকে বলা হয়, যেখানে আত্মগোপন করে শত্রুর অপেক্ষা করা হয়। যাতে সেখান হতে তার অতিক্রম করার সময় তড়িঘড়ি হামলা করা সম্ভব হয়। জাহান্নামের দারোগারাও জাহান্নামীদের অপেক্ষায় ঐরূপ বসে আছেন। অথবা জাহান্নাম নিজেই আল্লাহর আদেশে কাফেরদের জন্য ওঁৎ পেতে অপেক্ষা করছে। - তাফসীরে আহসানুল বায়ান

সূরা আন নাবা (النّبا), আয়াত: ২২
 
 لِّلطَّاغِیۡنَ مَاٰبًا
 
লিত্তা-গীনা মাআ-বা-।

অর্থঃ সীমালংঘনকারীদের আশ্রয়স্থলরূপে।

তাফসীর

 - তাফসীরে জাকারিয়া

 

 সূরা আন নাবা (النّبا), আয়াত: ২৩


 لّٰبِثِیۡنَ فِیۡهَاۤ اَحۡقَابًا
 

লা-বিছীনা ফীহাআহকা-বা-।


অর্থঃ সেখানে তারা যুগ যুগ ধরে অবস্থান করবে।(১)


তাফসীর

(১) অর্থাৎ তারা সেখানে অবস্থানকারী হবে সুদীর্ঘ বছর। আয়াতে ব্যবহৃত أحقاب শব্দটি حقب এর বহুবচন। এর অর্থ নির্ধারণ নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও স্বাভাবিকভাবে বলা যায় যে, এর দ্বারা ‘সুদীর্ঘ সময়’ উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। সুতরাং أحقاب দ্বারা তখন কোন সুনির্দিষ্ট সময় বোঝা উচিত হবে না। তাই উপরে এর অনুবাদ করা হয়েছে, “যুগ যুগ ধরে’। এর মানে হচ্ছে, একের পর এক আগমনকারী দীর্ঘ সময় তারা সেখানে অবস্থান করবে। এমন একটি ধারাবাহিক যুগ যে, একটি যুগ শেষ হবার পর আর একটি যুগ শুরু হয়ে যায়। একের পর এক আসতেই থাকবে এবং এমন কোন যুগ হবে না যার পর আর কোন যুগ আসবে না। [দেখুন: ইবন কাসীর] কুরআনের ৩৪ জায়গায় জাহান্নামবাসীদের জন্য ‘খুলুদ’ (চিরন্তন) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। তিন জায়গায় কেবল খুলুদ বলেই শেষ করা হয়নি বরং তার সাথে “আবাদান” (চিরকাল) শব্দও বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এক জায়গায় পরিষ্কার বলা হয়েছে, “তারা চাইবে জাহান্নাম থেকে বের হয়ে যেতে। কিন্তু তারা কখনো সেখান থেকে বের হতে পারবে না এবং তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী আযাব।” [সূরা আল-মায়েদাহ: ৩৭] - তাফসীরে জাকারিয়া


[1] أحقاب শব্দটি حقب-এর বহুবচন। এর অর্থ হল যুগ বা যামানা। উদ্দেশ্য হল যুগযুগ ধরে চিরকালের জন্য তারা জাহান্নামে থাকবে। এই শাস্তি কাফের এবং মুশরিকদের জন্য হবে। - তাফসীরে আহসানুল বায়ান


 সূরা আন নাবা (النّبا), আয়াত: ২৪

 
  لَا یَذُوۡقُوۡنَ فِیۡهَا بَرۡدًا وَّ لَا شَرَابًا
 
লা-ইয়াযূকূনা ফীহা-বারদাওঁ ওয়ালা-শারা-বা-।

অর্থঃ সেখানে তারা কোন ঠান্ডা (বস্তুর) স্বাদ গ্রহণ করতে পাবে না, আর কোন পানীয়ও (পাবে না);

তাফসীর

তাফসীরে আহসানুল বায়ান


সূরা আন নাবা (النّبا), আয়াত: ২৫
 
اِلَّا حَمِیۡمًا وَّ غَسَّاقًا 
 
ইল্লা-হামীমাওঁ ওয়াগাছছা-কা-।

অর্থঃ ফুটন্ত পানি ও পুঁজ ছাড়া(১);

তাফসীর

 (১) মূলে গাস্‌সাক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর অর্থ হয়ঃ পুঁজ, রক্ত, পুঁজ মেশানো রক্ত এবং চোখ ও গায়ের চামড়া থেকে বিভিন্ন ধরনের কঠোর দৈহিক নির্যাতনের ফলে যেসব রস বের হয়, যা প্রচণ্ড দুৰ্গন্ধযুক্ত। [ইবন কাসীর] -তাফসীরে জাকারিয়া

[1] যা জাহান্নামীদের দেহ হতে নির্গত হবে। -তাফসীরে আহসানুল বায়ান

 

 সূরা আন নাবা (النّبا), আয়াত: ২৬


 جَزَآءً وِّفَاقًا
 

জাঝাআওঁবিফা-কা-।


অর্থঃ এটাই (তাদের) উপযুক্ত প্রতিফল। [1]


তাফসীর

(১) অর্থাৎ জাহান্নামে তাদেরকে যে শাস্তি দেয়া হবে, তা ন্যায় ও ইনসাফের দৃষ্টিতে তাদের বাতিল বিশ্বাস ও কুকর্মের অনুরূপ হবে। এতে কোন বাড়াবাড়ি হবে না। [মুয়াস্‌সার, সা’দী] -তাফসীরে জাকারিয়া


[1] অর্থাৎ, এই শাস্তি তাদের সেই কুকর্মের অনুরূপ হবে, যা তারা পার্থিব জীবনে করত। - তাফসীরে আহসানুল বায়ান


 সূরা আন নাবা (النّبا), আয়াত: ২৭

 
  اِنَّهُمۡ کَانُوۡا لَا یَرۡجُوۡنَ حِسَابًا
 
ইন্নাহুম কা-নূলা-ইয়ারজুনা হিছা-বা-।

অর্থঃ তারা (পরকালে) হিসাবের আশঙ্কা করত না। [1]

তাফসীর

[1] এ কথা প্রথমোক্ত বাক্যের কারণ দর্শিয়ে বলা হয়েছে। অর্থাৎ, সে উল্লিখিত আযাবের উপযুক্ত। কেননা, সে মৃত্যুর পর পুনর্জীবনের প্রতি বিশ্বাসীই ছিল না, যাতে তারা হিসাব-নিকাশের আশঙ্কা করত। - তাফসীরে আহসানুল বায়ান


সূরা আন নাবা (النّبا), আয়াত: ২৮
 
وَّ کَذَّبُوۡا بِاٰیٰتِنَا کِذَّابًا
 
ওয়া কাযযাবূবিআ-য়া-তিনা-কিযযা-বা।

অর্থঃ এবং তারা আমার আয়াতসমূহকে চরমভাবে মিথ্যাজ্ঞান করত

তাফসীর

 (১) এ হচ্ছে তাদের জাহান্নামের ভয়াবহ আযাব ভোগ করার কারণ। তারা আল্লাহর সামনে হাজির হয়ে নিজেদের আসনের হিসেব পেশ করার সময়ের কোন আশা করত না। দ্বিতীয়ত, আল্লাহ যেসব আয়াত পাঠিয়েছিলেন সেগুলো মেনে নিতে তারা সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করত এবং সেগুলোকে মিথ্য বলে প্রত্যাখ্যান করত। [ফাতহুল কাদীর] - তাফসীরে জাকারিয়া

 

 সূরা আন নাবা (النّبا), আয়াত: ২৯


وَ کُلَّ شَیۡءٍ اَحۡصَیۡنٰهُ کِتٰبًا
 

ওয়া কুল্লা শাইয়িন আহসাইনা-হু কিতা-বা-।


অর্থঃ আমি সবকিছুই লিপিবদ্ধ করে সংরক্ষিত করেছি।


তাফসীর

[1] অর্থাৎ, লাওহে মাহ্ফুযে। অথবা সেই রেকর্ড (কর্ম-বিবরণী) উদ্দেশ্য, যা (কিরামান কাতিবীন) ফিরিশতাগণ লিখে থাকেন। কিন্তু প্রথম অর্থটি অধিকতর সঠিক। যেমন দ্বিতীয় স্থানে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,‘‘আমি প্রত্যেক জিনিস স্পষ্ট গ্রন্থে সংরক্ষিত রেখেছি।’’ (সূরা ইয়াসীন ১২ আয়াত) - তাফসীরে আহসানুল বায়ান


 সূরা আন নাবা (النّبا), আয়াত: ৩০

 
  فَذُوۡقُوۡا فَلَنۡ نَّزِیۡدَکُمۡ اِلَّا عَذَابًا
 
ফাযূকূফালান নাঝীদাকুম ইল্লা-‘আযা-বা-।

অর্থঃ সুতরাং তোমরা আস্বাদন কর, এখন তো আমি শুধু তোমাদের শাস্তিই বৃদ্ধি করতে থাকব। [1]

তাফসীর

[1] আযাব বৃদ্ধি করার অর্থ হল যে, এখন থেকে এই আযাব চিরস্থায়ী। যখনই তাদের চামড়া গলে যাবে, তখনই ওর স্থলে নুতন চামড়া সৃষ্টি করা হবে। (সূরা নিসা ৫৬ আয়াত) যখনই আগুন নিভে যাবে, তখনই পুনরায় তা প্রজ্বলিত করা হবে। (সূরা বানী ইস্রাঈল ৯৭ আয়াত) - তাফসীরে আহসানুল বায়ান


সূরা আন নাবা (النّبا), আয়াত: ৩১
 
اِنَّ لِلۡمُتَّقِیۡنَ مَفَازًا
 
 ইন্না লিলমুত্তাকীনা মাফা-ঝা-।

অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহভীরুদের জন্যই রয়েছে সফলতা;[1]

তাফসীর

 [1] দুর্ভাগ্যবানদের কথা আলোচনা করার পর এখন সৌভাগ্যবানদের আলোচনা এবং তাদের সেই নিয়ামতের বর্ণনা; যা তারা আখেরাতে উপভোগ করবে। আর এই সাফল্য ও নিয়ামত তাকওয়া (আল্লাহভীরুতা)র ফলে লাভ হবে। তাকওয়া হল ঈমান ও আনুগত্যের চাহিদার পরিপূর্ণতার নাম। সৌভাগ্যবান লোক তো তারাই, যারা ঈমান আনার পর তাকওয়া এবং নেক আমলে যত্নবান হয়। আল্লাহ আমাদেরকে তাদের দলভুক্ত করুন। আমীন। - তাফসীরে আহসানুল বায়ান

 

 সূরা আন নাবা (النّبا), আয়াত: ৩২


حَدَآئِقَ وَ اَعۡنَابًا
 

হাদাইকা ওয়া আ‘না-বা-।


অর্থঃ উদ্যানসমূহ ও নানাবিধ আঙ্গুর। [1]


তাফসীর

[1] এই বাক্য مفازًا-এর বদল। অর্থাৎ, সফলতার বিবরণ। - তাফসীরে আহসানুল বায়ান


 সূরা আন নাবা (النّبا), আয়াত: ৩৩

 
  وَّکَوَاعِبَ اَتۡرَابًا
 
ওয়া কাওয়া-‘ইবা আতরা-বা-।

অর্থঃ সমবয়স্কা, পূর্ণযৌবনা তরুণী। [1]

তাফসীর

(১) এর অর্থ এও হতে পারে যে, তারা পরস্পর সমবয়স্কা হবে। [মুয়াস্‌সার, সা’দী] - তাফসীরে জাকারিয়া

[1] كواعب শব্দটি كاعب-এর বহুবচন। যার অর্থ হল পায়ের গাঁট। যেমন গাঁট উঁচু হয়ে থাকে, ঠিক তেমনি তাদের স্তনগুলিও অনুরূপ উঁচু উঁচু হবে; যা তাদের রূপ-সৌন্দর্যের একটি সুদৃশ্য। (অর্থাৎ তারা সদ্য উদ্ভিন্ন স্তনের ষোড়শী তরুণী হবে।) أتراب শব্দের অর্থ হল সমবয়স্ক। - তাফসীরে আহসানুল বায়ান


সূরা আন নাবা (النّبا), আয়াত: ৩৪
 
وَّ کَاۡسًا دِهَاقًا
 
 ওয়া কা’ছান দিহা-কা-।

অর্থঃ এবং পরিপূর্ণ পানপাত্র। [1]

তাফসীর

 [1] دهاقًا -এর অর্থঃ পরিপূর্ণ কিংবা একের পর এক নিরবচ্ছিন্ন অথবা তা স্বচ্ছ ও নির্মল হবে। كأس এমন পানপাত্রকে বলা হয়, যা পূর্ণরূপে ভর্তি থাকে। - তাফসীরে আহসানুল বায়ান

 

 সূরা আন নাবা (النّبا), আয়াত: ৩৫


لَا یَسۡمَعُوۡنَ فِیۡهَا لَغۡوًا وَّ لَا کِذّٰبًا
 

লা-ইয়াছমা‘উনা ফীহা-লাগওয়াওঁ ওয়ালা-কিযযা-বা-।


অর্থঃ সেখানে তারা শুনবে না কোন অসার ও মিথ্যা কথা। [1]


তাফসীর

(১) জান্নাতে কোন কটুকথা ও আজেবাজে গল্পগুজব হবে না। কেউ কারো সাথে মিথ্যা বলবে না এবং কারো কথাকে মিথ্যাও বলবে না। কুরআনের বিভিন্ন স্থানে এ বিষয়টিকে জান্নাতের বিরাট নিয়ামত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। [সা’দী] - তাফসীরে জাকারিয়া

[1] অর্থাৎ, কোন অসার, ফালতু বা অশ্লীল কথাবার্তা সেখানে হবে না। আর না এক অপরকে মিথ্যা বলবে। - তাফসীরে আহসানুল বায়ান


 সূরা আন নাবা (النّبا), আয়াত: ৩৬

 
 جَزَآءً مِّنۡ رَّبِّکَ عَطَآءً حِسَابًا
 
জাঝাআম মির রাব্বিকা ‘আতাআন হিছা-বা-।

অর্থঃ এটা আপনার পালনকর্তার তরফ থেকে যথোচিত দান,

তাফসীর

((১) লক্ষণীয় যে, এসব নেয়ামত বর্ণনা করে বলা হয়েছে, জান্নাতের এসব নেয়ামত মুমিনদের প্রতিদান এবং আপনার রবের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত দান। এখানে জান্নাতের নেয়ামতসমূহকে প্রথমে কর্মের প্রতিদান ও পরে আল্লাহর দান বলা হয়েছে। প্রতিদান শব্দের পরে আবার যথেষ্ট পুরস্কার দেবার কথা বলার অর্থ এ দাঁড়ায় যে, তারা নিজেদের সৎকাজের বিনিময়ে যে প্রতিদান লাভের অধিকারী হবে কেবলমাত্র ততটুকুই তাদেরকে দেয়া হবে না বরং তার ওপর অতিরিক্ত পুরস্কার এবং অনেক বেশী পুরস্কার দেয়া হবে। বিপরীত পক্ষে জাহান্নামবাসীদের জন্য কেবলমাত্র এতটুকুই বলা হয়েছে যে, তাদেরকে তাদের কাজের পূর্ণ প্রতিফল দেয়া হবে। অর্থাৎ তাদের যে পরিমাণ অপরাধ তার চেয়ে বেশী শাস্তি দেয়া হবে না এবং কমও দেয়া হবে না। [দেখুন, তাতিস্মাতু আদওয়াউল বায়ান] কুরআন মজীদের বিভিন্ন স্থানে একথা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন সূরা ইউসুস ২৬–২৭ আয়াত, সূরা আন নামল ৮৯–৯০ আয়াত, সূরা আল কাসাস ৮৪ আয়াত, সূরা সাবা ৩৩ আয়াত এবং সূরা আল মু'মিন ৪০ আয়াত। - তাফসীরে জাকারিয়া

[1] عطاء -এর সাথে حساب শব্দটি অতিশয়োক্তি স্বরূপ ব্যবহার হয়ে থাকে। অর্থাৎ, সেখানে আল্লাহর দান, প্রতিদান ও অনুদানের পর্যাপ্তি ও প্রাচুর্য থাকবে। - তাফসীরে আহসানুল বায়ান


সূরা আন নাবা (النّبا), আয়াত: ৩৭
 
رَّبِّ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ وَ مَا بَیۡنَهُمَا الرَّحۡمٰنِ لَا یَمۡلِکُوۡنَ مِنۡهُ خِطَابًا
 
 রাব্বিছ ছামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদি ওয়ামা-বাইনাহুমাররাহমা-নি লা-ইয়ামলিকূনা মিনহু খিতা-বা-।

অর্থঃ যিনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী এবং উভয়ের অন্তর্বর্তী সবকিছুর প্রতিপালক; যিনি পরম করুণাময়। তাঁর নিকট কিছু বলার অধিকার তাদের থাকবে না। [1]

তাফসীর

(১) এই বাক্যটি পূর্বের বাক্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত। এর অর্থ এই হবে যে, এটি সে-রবের পক্ষ থেকে প্রতিদান, যিনি আসমান ও যমীনের রব; তাঁর অনুমতি ব্যতিরেকে কেয়ামতের ময়দানে কারও কথা বলার ক্ষমতা হবে না; যদি-না তিনি অনুমতি দেন। [মুয়াসসার] - তাফসীরে জাকারিয়া 

[1] অর্থাৎ, তাঁর মহত্ত্ব, ভাবগম্ভীরতা ও মহিমার অবস্থা এমন হবে যে, আগেভাগে তাঁর সাথে কথা বলার হিম্মত কারো হবে না। এই জন্য কেউ তাঁর অনুমতি ছাড়া কোন প্রকার সুপারিশের জন্য মুখ খুলতে পারবে না। - তাফসীরে আহসানুল বায়ান

 

 সূরা আন নাবা (النّبا), আয়াত: ৩৮


لَ یَوۡمَ یَقُوۡمُ الرُّوۡحُ وَ الۡمَلٰٓئِکَۃُ صَفًّا ؕ٭ۙ لَّا یَتَکَلَّمُوۡنَ اِلَّا مَنۡ اَذِنَ لَهُ الرَّحۡمٰنُ وَ قَالَ صَوَابًا 
 

ইয়াওমা ইয়াকূমুর রূহুওয়াল মালাইকাতুসাফফাল লা-ইয়াতাকাল্লামূনা ইল্লা-মান আযিনা লাহুর রাহমা-নুওয়া কা-লা সাওয়া-বা-।


অর্থঃ সেদিন রূহ (জিবরীল) ও ফিরিশতাগণ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবে,[1] পরম করুণাময় যাকে অনুমতি দিবেন সে ছাড়া অন্যেরা কথা বলতে পারবে না এবং সে সঠিক কথা বলবে। [2]


তাফসীর

(১) অধিকাংশ তাফসীরকারগণের মতে ‘রূহ’ বলে এখানে জিবরীল আলাইহিস সালামকে বোঝানো হয়েছে। [মুয়াস্‌সার, সা’দী] ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত আছে যে, রূহ দ্বারা আল্লাহ তা'আলার এক বড় আকৃতির ফেরেশতাকে বোঝানো হয়েছে। কাতাদাহ বলেন, এখানে রূহ বলে আদম সন্তানদেরকে বোঝানো হয়েছে। শেষোক্ত দু'টি তাফসীর অনুযায়ী দুটি সারি হবে- একটি রূহের ও অপরটি ফেরেশতাগণের। [আত-তাফসীর আস-সাহীহ]

(২) এখানে কথা বলা মানে শাফা’আত করা বলা হয়েছে। শাফা’আত করতে হলে যে ব্যক্তিকে যে গুনাহগারের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে শাফা’আত করার অনুমতি দেয়া হবে একমাত্র সে-ই তার জন্য শাফা’আত করতে পারবে। আর শাফা’আতকারীকে সঠিক ও যথার্থ সত্য কথা বলতে হবে। অন্যায় সুপারিশ করতে পারবে না। [দেখুন: কুরতুবী] - তাফসীরে জাকারিয়া

[1] এখানে জিবরীল (আঃ) সহ রূহের কয়েকটি অর্থ বর্ণনা করা হয়েছে। ইমাম ইবনে কাসীর আদম-সন্তান (মানুষ)-এর অর্থকেই সঠিকতার অধিক কাছাকাছি বলে মন্তব্য করেছেন।

[2] এই অনুমতি আল্লাহ তাআলা ফিরিশতাগণকে এবং স্বীয় পয়গম্বরগণকে দান করবেন এবং তাঁরা যা কিছু কথা বলবেন তা হক, সত্য ও সঠিক বলবেন। অথবা এর ভাবার্থ হল যে, অনুমতি কেবলমাত্র তার জন্য দেওয়া হবে, যে সঠিক কথা বলেছে; অর্থাৎ, কলেমা তাওহীদের স্বীকৃতি প্রদান করেছে। - তাফসীরে আহসানুল বায়ান


 সূরা আন নাবা (النّبا), আয়াত: ৩৯

 
 ذٰلِکَ الۡیَوۡمُ الۡحَقُّ ۚ فَمَنۡ شَآءَ اتَّخَذَ اِلٰی رَبِّهٖ مَاٰبًا 
 
যা-লিকাল ইয়াওমুল হাক্কু ফামান শাআত্তাখাযা ইলা-রাব্বিহী মাআ-বা-।

অর্থঃ ঐ দিন সুনিশ্চিত,[1] অতএব যার ইচ্ছা সে তার প্রতিপালকের কাছে আশ্রয় গ্রহণ করুক। [2]

তাফসীর

[1] অর্থাৎ, ঐ দিন অবশ্যম্ভাবী।

[2] অর্থাৎ, আগামী ঐ দিনকে স্মরণে রেখে ঈমান ও তাকওয়ার জীবনকে বেছে নিক। যাতে সেখানে তার উত্তম ঠিকানা লাভ হয়। - তাফসীরে আহসানুল বায়ান


সূরা আন নাবা (النّبا), আয়াত: ৪০
 
اِنَّاۤ اَنۡذَرۡنٰکُمۡ عَذَابًا قَرِیۡبًا ۬ۚۖ یَّوۡمَ یَنۡظُرُ الۡمَرۡءُ مَا قَدَّمَتۡ یَدٰهُ وَ یَقُوۡلُ الۡکٰفِرُ یٰلَیۡتَنِیۡ کُنۡتُ تُرٰبًا
 
ইন্নাআনযারনা-কুম ‘আযা-বান কারীবাইঁ ইয়াওমা ইয়ানযু রুল মারউ মা-কাদ্দামাত ইয়াদা-হু ওয়া ইয়াকূলুল কা-ফিরু ইয়া-লাইতানী কুনতুতুরা-বা।

অর্থঃ নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে আসন্ন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করলাম;[1] সেদিন মানুষ তার কৃতকর্ম প্রত্যক্ষ করবে [2] এবং অবিশ্বাসী বলবে, হায় আফসোস! যদি আমি মাটি হয়ে যেতাম।[3]

তাফসীর

(3) আবদুল্লাহ ইবনে আমর, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম থেকে বর্ণিত আছে, কেয়ামতের দিন সমগ্র ভূপৃষ্ঠ এক সমতল ভূমি হয়ে যাবে। এতে মানব জিন, গৃহপালিত জন্তু এবং বন্য জন্তু সবাইকে একত্রিত করা হবে। জন্তুদের মধ্য কেউ দুনিয়াতে অন্য জন্তুর উপর জুলুম করে থাকলে তার কাছ থেকে প্রতিশোধ নেয়া হবে। এমন কি কোন শিংবিশিষ্ট ছাগল কোন শিংবিহীন ছাগলকে মেরে থাকলে সেদিন তার প্রতিশোধ নেয়া হবে। এই কর্ম সমাপ্ত হলে সব জন্তুকে আদেশ করা হবেঃ মাটি হয়ে যাও। তখন সব মাটি হয়ে যাবে। এই দৃশ্য দেখে কাফেররা আকাজক্ষা করবে – হায়! আমরাও যদি মাটি হয়ে যেতাম। এরূপ হলে আমরা হিসাব-নিকাশ ও জাহান্নামের আযাব থেকে বেঁচে যেতাম। [মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/৩৪৫ ৪/৫৭৫, মুসনাদে ইসহাক ইবনে রাহওয়াই: ৩২২, সিলসিলা সহীহা: ১৯৬৬] - তাফসীরে জাকারিয়া

[1] অর্থাৎ, কিয়ামতের দিবসের আযাব সম্পর্কে যা অতি নিকটেই। কেননা, তার আগমন সুনিশ্চিত সত্য। আর প্রতিটি জিনিস যা আসবে তা অতি নিকটেই। যেহেতু যে কোন প্রকারে তা আসবেই আসবে।

[2] অর্থাৎ, ভাল ও মন্দ যে আমলই সে পার্থিব জীবনে করেছে তা আল্লাহর নিকট পৌঁছে গেছে। কিয়ামতের দিন তা তার সামনে এসে যাবে এবং সে তা স্বচক্ষে দেখতে পাবে। ‘‘তারা তাদের কৃতকর্ম সম্মুখে উপস্থিত পাবে।’’ (সূরা কাহ্ফ ৪৯ আয়াত) ‘‘সেদিন মানুষকে অবহিত করা হবে যে, সে কী অগ্রে পাঠিয়েছে ও কী পশ্চাতে রেখে গেছে।’’ (সূরা ক্বিয়ামাহ ১৩ আয়াত)

[3] অর্থাৎ, যখন সে নিজের ভয়ঙ্কর আযাব দেখে নেবে, তখন সে এই আকাঙ্ক্ষা করবে। কোন কোন আলেম বলেন, আল্লাহ তাআলা পশুদের মাঝেও ন্যায়পরায়ণতা ও সুবিচারের সাথে ফায়সালা করবেন। এমনকি যদি কোন শিংবিশিষ্ট পশু কোন শিংবিহীন পশুর প্রতি অত্যাচার করে থাকে তাহলে তারও বদলা দেওয়া হবে। তারপর আল্লাহ পশুদেরকে বলবেন, তোমরা মাটিতে পরিণত হও। তখন তারা মাটি হয়ে যাবে। আর সেই সময় কাফেররাও বাসনা করবে যে, তারাও যদি পশু হতো এবং তাদের মত আজ মাটি হয়ে যেতে পারত! (তাফসীর ইবনে কাসীর) - তাফসীরে আহসানুল বায়ান

> পরবর্তী সূরা আন নাযিয়াত

{"mode":"full","isActive":false}
{"mode":"full","isActive":false}
{"mode":"full","isActive":false}
{"mode":"full","isActive":false}
{"mode":"full","isActive":false}
{"mode":"full","isActive":false}
{"mode":"full","isActive":false}
{"mode":"full","isActive":false}
{"mode":"full","isActive":false}
{"mode":"full","isActive":false}
{"mode":"full","isActive":false}

Post a Comment

0 Comments